Wednesday 24 December 2014

ক্লায়েন্টকে বুঝুন, আপনার পকেটকে নয়

আমরা অনেক সময় আমাদের স্কিল জবের সাথে মিলে যাওয়ার পরও অথবা সুন্দর ভাবে কাভার লেটার লেখার পরেও জব পাই না। আমরা অনেকেই এ নিয়ে হা-হুতাশ করি। কিন্তু বুঝতে চাই না সেই মুখ্য বিষয়টি যেটি জব পাওয়ার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। একটি জবকে পুরোপুরি বোঝার আগেই আমরা না বুঝে কাভার লেটার লিখে ফেলি। কিন্তু সেই কাভার লেটারে আপনি নিজেকে, নিজের পারদর্শিতাকে যত সুন্দর-গোছানো ভাবে উপস্থাপন করেন না কেন, ক্লায়েন্ট আপনার প্রতি আগ্রহ হবে না। আমি জানি আপনার মনে এখন একটি বড় প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে যে ‘কেন?’
সহজ এ একটি বিষয়ের উপর আপনি লক্ষ্য করলেই বুঝতে পারবেন। ধরুন আপনি দোকানে গেলেন একটি সাবান কিনতে। কিন্তু দোকানদার আপনাকে সয়াবিন তেলের বোতল এনে তার গুনাগুন বলতে লাগলো। এখানে সে সয়াবিন তেলের যত গুনাগুণই বর্ণনা করুক না কেন, আপনি তো সেই তেল নেবেন না। কারণ আপনার তো সেই তেলের প্রয়োজন নেই।
ঠিক এরকমই আপনি আপনার ক্লায়েন্টের সামনে আপনার যত স্কিলই বর্ণনা করেন না কেন ক্লায়েন্ট আপনার প্রতি ইন্টারেস্টেড হবে না যতক্ষন না পর্যন্ত সে আপনার মধ্যে এমন কিছু দেখে যেটা তার কাজে লাগবে।
যেমন ধরুন আপনি একটা কনটেন্ট রাইটিং জবের জন্য অ্যাপ্লাই করছেন। ক্লায়েন্ট চাইছে যে তার একজন SEO আর্টিকেল রাইটার দরকার যে তার ওয়েবসাইটের জন্য মানসম্পন্ন কনন্টেন্ট লিখতে পারবে যাতে করে তার ওয়েবসাইট গুগল র‌্যাঙ্কিং এ প্রথম সারিতে থাকে। এখন আপনি কাভার লেটারে লিখলেন, আপনি খুব সাজিয়ে গুছিয়ে সেনটেন্স লিখতে পারেন, আপনার লেখা খুবই শ্রুতিমধুর, আপনার যতিচিহ্নের ব্যবহার খুব ভালো ইত্যাদি ইত্যাদি…
কিন্তু আপনি কোথাও আপনার SEO স্কিলের ব্যাপারে লিখলেন না। এখানে ব্যাপারটি সেই দোকানদারের মত হয়ে গেল। ক্লায়েন্ট যেটা চাচ্ছে সেটা আপনি তাকে দিতে পারছেন না। তাহলে সে কেন আপনাকে হায়ার করবে? হায়ার করে তার লাভ কি হবে? আপনি এমন কি সার্ভিস দিতে পারছেন তাকে যাতে করে তার ব্যবসার জন্য লাভজনক হয়ে দাঁড়াবে?relation-2
ক্লায়েন্টের যেটা দরকার সেই অনুযায়ী কাভার লেটার লিখুন। ক্লায়েন্ট কি চাইছে সেটা দেখুন। আপনার সবকিছুই আপনার ক্লায়েন্টেকে কেন্দ্র করে ঘুরবে। ক্লায়েন্টেকে যে যত বেশি সুবিধা দিতে পারবে তার জবটি পাওয়ার সম্ভাবনা তত বেশি।
মনে রাখবেনঃ
ক্লায়েন্টের চাহিদা বুঝুন, সেই অনুযায়ী নিজের স্কিলগুলো উপস্থাপন করুন। যেই জবে আপনার স্কিল ম্যাচ করে না সেই জবে অ্যাপ্লাই করার দরকার নেই। সব জব আপনার জন্য না। বুঝে শুনে অ্যাপ্লাই করবেন। ফ্রিল্যান্সারদের সময়ের মূল্য অনেক। একে সঠিকভাবে ব্যবহার করতে শিখুন।

আপনার সার্ভিস দ্বারা ক্লায়েন্ট কি কি সুবিধা পাবে, কিভাবে আপনার সার্ভিস তার জন্য লাভজনক হবে সব গুছিয়ে লিখুন। দেখবেন জবটি পাওয়া আপনার জন্য অনেক সহজ হয়ে যাবে। আপনার সার্ভিস শুরুতেই বেচার চেয়ে আগে মান তৈরি করুন, তারপর বেচুন। দেখবেন ভালোই সাড়া পাবেন।

এখানে দেখুন আমি বারবার ‘সার্ভিস’ বলছি। কেন জানেন? যারা ভালো ফ্রিল্যান্সার তারা ভালো করেই জানেন। আর যারা ভালো ফ্রিল্যান্সার হওয়ার দৌড়ে আছে তাদের মনে এই প্রশ্নটি অবশ্যই আসবে। আমরা যারা ফ্রিল্যান্সিং এর শুরুর দিকে তারা অনেকেই ফ্রিল্যান্সিং কে জব মনে করে থাকি। ইংলিশে জব লেখা থাকে বলে এটিকে জব বা চাকরি মনে করেই ভুল করে বসি  কিন্তু না, ফ্রিল্যান্সিং কোনো চাকরি নয়; এটি হল আপনার স্বতন্ত্র ব্যবসা। এখানে একজন ব্যবসায়ীর মতই এগোতে হয়। চাকরিপ্রার্থীর মত এগোলে আপনি কখনই ফ্রিল্যান্সিং এ খুব ভালো করতে পারবেন না। এখানে আপনার পরিচয় হবে একজন ব্যবসায়ীর। তাই সবক্ষেত্রেই আপনার কথাবার্তা একজন ব্যবসায়ীর মত হতে হবে।

ক্লায়েন্টকে খুশি করা এবং তার মনোযোগ আকর্ষণ করাই হবে আপনার মূল লক্ষ্য। আর ক্লায়েন্টের মনোযোগ আকর্ষণ করবেন কিভাবে? সে কি চায় সে অনুযায়ী আপনি কত বেশি তার রিকোয়ারমেন্ট পূরণ করতে পারছেন।

কথা বলতে হবে ক্লায়েন্টের সুরে। আপনার পকেটের সুরে নয়। যদি সারাক্ষণ টাকার চিন্তা করেন তাহলে কখনই ভালো করতে পারবেন না । আপনি যদি একটি ব্যবসায় নামেন তাহলে কি প্রথম দিকেই কি আপনি লাভের আশা করেন? কোনো ব্যবসাতেই কোনো ব্যবসায়ী এমনটা করে না। তাহলে এটাও তো আপনার ব্যবসা।

1 comment: