Wednesday 24 December 2014

পেশা হিসেবে অনলাইন ফ্রিল্যান্সিং

আমাদের দেশে দিন দিন ফ্রিল্যান্সারের সংখ্যা বেড়েই চলছে। নিঃসন্দেহে আমাদের জন্য সুখবর। তবে আমাদের মাঝে কিছু ভ্রান্ত ধারনা আছে। একটি কম্পিউটার, ইন্টারনেট কানেকশান এবং ওডেস্ক/ইল্যান্স ইত্যাদি তে রেজিস্টার করলেই নিজেকে/তাকে ফ্রিল্যান্সার বলা যায়না।
ফ্রিল্যান্সার হবার প্রথম ও মূল শর্ত আপনাকে কোন একটি কাজ অবশই জানতে হবে। ভালোভাবেই জানতে হবে।
কাজ পাওয়া না পাওয়া পরের কথা।

অনেকেই বলে থাকেন ফ্রিল্যান্সারদের কাজ সবসময় থাকেনা। একথাটি পরের বার বলার আগে কিছু কথা জেনে নেয়া যাকঃ

আমার নিজস্ব মত ফ্রিল্যান্সিং পেশা শুধু কাজ করাই না, বরং অনেকটা ব্যবসা সম্পর্কিত। এখানে বিক্রিত বস্তু হচ্ছে জ্ঞান ও শ্রম।
অগনিত ক্রেতা। এখন ক্রেতা কে আকৃষ্ট করে যত বেশি পরিমান বিক্রয় করা যায় তাই লক্ষ্য। যদিও কথাটি পুরোপুরি এমন নয় তবুও ভালোভাবে বোঝানোর জন্য লেখা।

আমরা অনেকেই পার্ট-টাইম এবং ফুলটাইম নিয়ে কথা বলি। মূলত ফ্রিল্যান্সার এর জন্য পার্ট/ফুল টাইম বলে তেমন কোন কথা নেই।
তারপরও যারা আমাদের চিরাচরিত নিয়ম নিয়ে পার্ট/ফুল টাইম ফ্রিল্যান্সিং এর কথা বলে তাঁদের স্থানে নিজেকে দাড় করিয়ে বলতে হলেঃ

পার্ট/ফুল টাইম যেভাবেই এই পেশাকে নিন না কেন আপনাকে কাজ জানতেই হবে।

পার্ট-টাইম এর কথা চিন্তা করতে হলে প্রথমেই যে প্রশ্নটি আসে - আপনি কাজ জানেন কিনা !!
কাজ না জানলে নরমাল কাজগুলো অল্প সময়ে শিখে নিয়ে কাজ করতে পারেন। অথবা কঠিন কাজগুলো জানা থাকলে কাজ করতে পারেন। চাইলে কঠিন কাজগুলো শিখেও পার্ট-টাইম হিসেবে করতে পারেন।

এই চিন্তায় এগিয়ে গেলে প্রথমেই আমাদের কাছে যে সমস্যাটি প্রকাশ পায়- কাজ পাচ্ছিনা কেন?? 

অনলাইন ফ্রিল্যান্সিং পেশায় কাজ পেতে হলে অবশই আপনাকে ভালোভাবেই চেষ্টা করতে হবে কাজ পেতে।
- অ্যাপ্লাই এর টাইমিং
- কভার লেটার
- আপনার প্রোফাইল
- আপনার জ্ঞান এবং কাজের মধ্যকার মিল।
অনলাইন ফ্রিল্যান্সিং পেশায় বিশেষ করে এই বিষয়গুলো গুরুত্বপূর্ণ।

আর যদি ফুলটাইমের কথায় আসি তবে যে কথাটি মনে রাখা প্রয়োজন -
আমি যে কাজটি জানি/আমার পক্ষে শিখা সম্ভব তা ভালোভাবে আয়ত্ত করে এই পেশায় আসা প্রয়োজন। 

ফ্রিল্যান্সিং সাধারন কোন পেশা নয়। কাজ না জেনে এই পেশায় কাজ পাওয়া সম্ভব কিন্তু কাজ করা সম্ভব নয়।  ফলে অচিরেই ঝরে পরতে হয় অথবা হতাশ হতে হয়। এখানে ক্লিক করলেই টাকা এমনটা ভাবলে ভুল হবে। এখানে আপনার কাজের মাধ্যমেই আপনার মূল্যায়ন করা হবে। 
শুরুতেই হেন কারেঙ্গা তেন কারেঙ্গা মনোভাব পরিহার করা দরকার। অনেক ক্ষেত্রেই শুরুটা কিছুটা ধীরে হয়ে থাকে। তবে ভালো কাজ জানলে একটা সময় আসবে যখন আপনি কাজ নিয়েই ব্যস্ত থাকবেন এবং সময়ের অভাবেই অনেক কাজের সুযোগ আপনি নিজেই ফিরিয়ে দিবেন।  তাই -
প্রয়োজনে ধীরস্থির হয়ে সময় নিয়ে কোন একটি কাজ ভালোভাবে শিখে এই পেশায় আসুন। কাজ ভালোভাবে শিখতে ও করতে পারলে শিখার এই সময়টার সুফল আপনি সারাজীবন-ই পাবেন। 

এই পেশায় ভালো করতে হলে কাজ জানা ছাড়াও আরো কয়েকটি দিক ঠিক রাখাটা গুরুত্তপূর্ণঃ
** Availability
** Conversation skill
** Fast Learning Knowledge.

এত কথা কেন যেন বলছিলাম???

হুম ফ্রিল্যান্সারদের কাজ সবসময় থাকেনা। আপনি কাজ জানলে কাজ পাবেন এটা আশা করা যায়। উপরের লেখাতে ভালোভাবে বোঝানো হয়েছে।

আর উপার্জনের কথা যদি বলতে হয় তবে -

অনেক পার্থক্য আমাদের দেশীয় উপার্জন থেকে। আপনি ভালো কাজ জানলে হয়তো আপনার দেশীয় জব বন্ধ করে দিবেন।

তাহলে প্রশ্ন আসতে পারে কি কি কাজ করা যায়!!!

ফ্রীল্যান্সিং– যেভাবে শুরু করবেন

বর্তমানে ফ্রীল্যান্সিং একটি জনপ্রিয় কর্মক্ষেত্র। খুব সহজে এবং বিনা পুজিতে আপনি ফ্রীল্যান্সিং শুরু করতে পারেন। আমামদের দেশে অনেক প্রতিভা আছে, আছে অনেক সম্ভাবনা শুধু দরকার তাদেরকে সঠিক তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করা। শুধু মাত্র সঠিক তথ্য এবং দিকনির্দেশনার অভাবে আমরা পিছিয়ে যাচ্ছি। আমার এই লেখাতে আমি চেষ্টা করব, কিভাবে আপনি ফ্রীল্যান্সিং শুরু করবেন।

ফ্রীল্যান্সিং কি? সহজ কথায় ফ্রীল্যান্সিং হল অন্য কার কাজ করে দেয়া। আমামদের দেশে ফ্রীল্যান্সিং বলতে আমরা বুঝি অন্য দেশের কাজ একটা মার্কেটপ্লেস থেকে যোগাযোগ করে, কাজ নেয়া এবং সেটা করা।

ফ্রীল্যান্সিং এর ক্ষেত্র - odesk. Elance, freelancer, আরও অনেক সাইট রয়েছে যেখানে আপনি বিনা মুল্লে নিবন্ধিত হতে পারেন এবং কাজ শুরু করতে পারেন।

ফ্রীল্যান্সিং এর সুবিধা- ফ্রীল্যান্সিং এর  অনেক সুবিধা আছে, যেমন আপনি নিজে নিজের কাজ ঠিক করতে পারছেন, নিজের পছন্দ মত কাজ বেছে নেয়ার সুযোগ, মার্কেট সম্পর্কে ধারনা পাবেন, আন্তর্জাতিক মানের কোম্পানির সাথে কাজ করার সুযোগ, নিজের পরিচয় এবং কাজকে অন্যকে জানাতে পারছেন, অবশ্যই আপনি উপার্জন করছেন, আপনার দক্ষতা যাচাই করার সুযোগ পাচ্ছেন, সর্বোপরি এই বিশ্বায়নের যুগে নিজেকে প্রস্তুত করতে পারছেন।

কি কি ফ্রীল্যান্সিং করতে পারেন- অনেক ধরনের কাজ আছে, আপনি আপনার পছন্দ এবং যোগ্যতা অনুযায়ী যেকোনো কাজ করতে পারেন। তবে আপনি যে কাজটি করবেন, তার একটি নুন্নতম মান থাকা ভাল বলে আমার মনে হয়। ওয়েব ডিজাইন, প্রোগ্রামিং, সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইযেসান, লেখালেখি, ডিজাইন করা, অ্যাপলিকেসান ডেভেলপমেন্ট করা ইত্যাদি আপনাকে ভিন্ন উচ্চতাই নিয়ে যেতে পারে। শুধু মাত্র টাকা উপার্জন করার জন্য ফ্রীল্যান্সিং করা এবং নিজের অমূল্য সময় নষ্ট করা একই কথা। আপনাকে অবশ্যই এমন কাজ বেছে নেয়া উচিত যেটা আপনার ভবিষ্যতে কাজে লাগবে। আপনি এমন কাজ করেন, যেটা দিয়ে আপনি অর্থ উপার্জন করতে পারবেন, গর্ব করতে পারবেন এবং ভবিষ্যতে আপনার কাজে লাগবে।

ফ্রীল্যান্সিং এর জন্য চাই সঠিক দিকনির্দেশনা – সঠিক দিকনির্দেশনা পেলে, আপনিও হতে পারেন একজন সফল ফ্রিলানসার। এক্ষেত্রে আমার পরামর্শ হল, গতানুগতিক কোন প্রথিষ্ঠান না গিয়ে, সফল ফ্রিলানসারদের সহযোগিতা নেয়া, তাদের কাছ থেকে সরাসরি হাতে কলমে শিক্ষা নেয়া, কেননা তারা কাজ করেছে , তারা জানে কথাই ভুল হয়, কোনটা করা ভাল আর কোনটা করা ঠিক না।

নিজেকে ফ্রীল্যান্সিংএর জন্য তৈরি করুন- প্রথমে কোন কিছু  না জেনে, ফ্রীল্যান্সিং শুরু করা ঠিক না। প্রথমে নিজেকে তৈরি করুন এবং এরপর শুরু করুন। খুব ভাল হয়, আপনি যদি কোন একটা বা একাধিক কাজের উপর প্রশিক্ষন নেন। যেমন ধরুন, ওয়েব ডিজাইন এর কথা HTML, CSS দিয়ে আপনি কাজ শুরু করতে পারেন এবং কাজ করতে করতে নিজেকে আর দক্ষ করে তুলতে পারেন। কাজ করার জন্য সময় নির্বাচন, কমপিউটার এবং অন্য সব কিছু ঠিক করে নিতে হবে এবং সর্বোপরি নিজেকে কাজ করার উপযোগী করে তুলতে হবে এবং আমি আবার বলছি, এক্ষেত্রে প্রশিক্ষন এর কোন বিকল্প নেই। আপনার নিজের কিছু কাজের নমুনা, (Portfolio), কোন নিজস্ব ব্লগ, ফোরাম আপনাকে অন্নদের থেকে এগিয়ে রাখবে, এর যদি আপনার নিজস্ব ওয়েব পেইজ থাকে তাহলে অনেক ভাল হয়।  

ক্লায়েন্টকে বুঝুন, আপনার পকেটকে নয়

আমরা অনেক সময় আমাদের স্কিল জবের সাথে মিলে যাওয়ার পরও অথবা সুন্দর ভাবে কাভার লেটার লেখার পরেও জব পাই না। আমরা অনেকেই এ নিয়ে হা-হুতাশ করি। কিন্তু বুঝতে চাই না সেই মুখ্য বিষয়টি যেটি জব পাওয়ার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। একটি জবকে পুরোপুরি বোঝার আগেই আমরা না বুঝে কাভার লেটার লিখে ফেলি। কিন্তু সেই কাভার লেটারে আপনি নিজেকে, নিজের পারদর্শিতাকে যত সুন্দর-গোছানো ভাবে উপস্থাপন করেন না কেন, ক্লায়েন্ট আপনার প্রতি আগ্রহ হবে না। আমি জানি আপনার মনে এখন একটি বড় প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে যে ‘কেন?’
সহজ এ একটি বিষয়ের উপর আপনি লক্ষ্য করলেই বুঝতে পারবেন। ধরুন আপনি দোকানে গেলেন একটি সাবান কিনতে। কিন্তু দোকানদার আপনাকে সয়াবিন তেলের বোতল এনে তার গুনাগুন বলতে লাগলো। এখানে সে সয়াবিন তেলের যত গুনাগুণই বর্ণনা করুক না কেন, আপনি তো সেই তেল নেবেন না। কারণ আপনার তো সেই তেলের প্রয়োজন নেই।
ঠিক এরকমই আপনি আপনার ক্লায়েন্টের সামনে আপনার যত স্কিলই বর্ণনা করেন না কেন ক্লায়েন্ট আপনার প্রতি ইন্টারেস্টেড হবে না যতক্ষন না পর্যন্ত সে আপনার মধ্যে এমন কিছু দেখে যেটা তার কাজে লাগবে।
যেমন ধরুন আপনি একটা কনটেন্ট রাইটিং জবের জন্য অ্যাপ্লাই করছেন। ক্লায়েন্ট চাইছে যে তার একজন SEO আর্টিকেল রাইটার দরকার যে তার ওয়েবসাইটের জন্য মানসম্পন্ন কনন্টেন্ট লিখতে পারবে যাতে করে তার ওয়েবসাইট গুগল র‌্যাঙ্কিং এ প্রথম সারিতে থাকে। এখন আপনি কাভার লেটারে লিখলেন, আপনি খুব সাজিয়ে গুছিয়ে সেনটেন্স লিখতে পারেন, আপনার লেখা খুবই শ্রুতিমধুর, আপনার যতিচিহ্নের ব্যবহার খুব ভালো ইত্যাদি ইত্যাদি…
কিন্তু আপনি কোথাও আপনার SEO স্কিলের ব্যাপারে লিখলেন না। এখানে ব্যাপারটি সেই দোকানদারের মত হয়ে গেল। ক্লায়েন্ট যেটা চাচ্ছে সেটা আপনি তাকে দিতে পারছেন না। তাহলে সে কেন আপনাকে হায়ার করবে? হায়ার করে তার লাভ কি হবে? আপনি এমন কি সার্ভিস দিতে পারছেন তাকে যাতে করে তার ব্যবসার জন্য লাভজনক হয়ে দাঁড়াবে?relation-2
ক্লায়েন্টের যেটা দরকার সেই অনুযায়ী কাভার লেটার লিখুন। ক্লায়েন্ট কি চাইছে সেটা দেখুন। আপনার সবকিছুই আপনার ক্লায়েন্টেকে কেন্দ্র করে ঘুরবে। ক্লায়েন্টেকে যে যত বেশি সুবিধা দিতে পারবে তার জবটি পাওয়ার সম্ভাবনা তত বেশি।
মনে রাখবেনঃ
ক্লায়েন্টের চাহিদা বুঝুন, সেই অনুযায়ী নিজের স্কিলগুলো উপস্থাপন করুন। যেই জবে আপনার স্কিল ম্যাচ করে না সেই জবে অ্যাপ্লাই করার দরকার নেই। সব জব আপনার জন্য না। বুঝে শুনে অ্যাপ্লাই করবেন। ফ্রিল্যান্সারদের সময়ের মূল্য অনেক। একে সঠিকভাবে ব্যবহার করতে শিখুন।

আপনার সার্ভিস দ্বারা ক্লায়েন্ট কি কি সুবিধা পাবে, কিভাবে আপনার সার্ভিস তার জন্য লাভজনক হবে সব গুছিয়ে লিখুন। দেখবেন জবটি পাওয়া আপনার জন্য অনেক সহজ হয়ে যাবে। আপনার সার্ভিস শুরুতেই বেচার চেয়ে আগে মান তৈরি করুন, তারপর বেচুন। দেখবেন ভালোই সাড়া পাবেন।

এখানে দেখুন আমি বারবার ‘সার্ভিস’ বলছি। কেন জানেন? যারা ভালো ফ্রিল্যান্সার তারা ভালো করেই জানেন। আর যারা ভালো ফ্রিল্যান্সার হওয়ার দৌড়ে আছে তাদের মনে এই প্রশ্নটি অবশ্যই আসবে। আমরা যারা ফ্রিল্যান্সিং এর শুরুর দিকে তারা অনেকেই ফ্রিল্যান্সিং কে জব মনে করে থাকি। ইংলিশে জব লেখা থাকে বলে এটিকে জব বা চাকরি মনে করেই ভুল করে বসি  কিন্তু না, ফ্রিল্যান্সিং কোনো চাকরি নয়; এটি হল আপনার স্বতন্ত্র ব্যবসা। এখানে একজন ব্যবসায়ীর মতই এগোতে হয়। চাকরিপ্রার্থীর মত এগোলে আপনি কখনই ফ্রিল্যান্সিং এ খুব ভালো করতে পারবেন না। এখানে আপনার পরিচয় হবে একজন ব্যবসায়ীর। তাই সবক্ষেত্রেই আপনার কথাবার্তা একজন ব্যবসায়ীর মত হতে হবে।

ক্লায়েন্টকে খুশি করা এবং তার মনোযোগ আকর্ষণ করাই হবে আপনার মূল লক্ষ্য। আর ক্লায়েন্টের মনোযোগ আকর্ষণ করবেন কিভাবে? সে কি চায় সে অনুযায়ী আপনি কত বেশি তার রিকোয়ারমেন্ট পূরণ করতে পারছেন।

কথা বলতে হবে ক্লায়েন্টের সুরে। আপনার পকেটের সুরে নয়। যদি সারাক্ষণ টাকার চিন্তা করেন তাহলে কখনই ভালো করতে পারবেন না । আপনি যদি একটি ব্যবসায় নামেন তাহলে কি প্রথম দিকেই কি আপনি লাভের আশা করেন? কোনো ব্যবসাতেই কোনো ব্যবসায়ী এমনটা করে না। তাহলে এটাও তো আপনার ব্যবসা।